আমার সম্পর্কে

আমার ফটো
kolkata, west bengal, India
৭০ দশকের এক অগ্রগণ্য বিশিষ্ট কবি। জন্ম-২৭ডিসেম্বর ১৯৫৩। জন্ম- কলকাতার দর্জিপাড়া ম্যাটারনিটি হোম।বসবাস-নিমতা। সাহিত্যের সব কটি শাখায় পারদর্শীতা আছে।অনুবাদ করেছেন বিভিন্ন ভাষার কবিতা। ছন্দ ও ছন্দহীনতায় সমান ব্যুৎপত্তি।পুরাণ,দর্শন,সমাজতত্ত্ব,ইতিহাস,বিজ্ঞান,সবকিছুই উঠে এসেছে তাঁর লেখায়। ‘সৌহার্দ্য সত্তর’,এর হয়ে প্রতিবেশী বাংলা দেশে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে ভ্রমণ করেছেন।তাঁর দীর্ঘ কবিতার সংকলন “ অনত্থপদ সংহিতা” ২০১৫ এর বিভূতিভূষণ স্মৃতি পুরস্কার –এ সম্মানিত হয়েছে। বহুদিন ধরে লিটল ম্যাগাজিনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে নিজেকে যুক্ত রেখেছেন।‘ ক্লেদজ কুসুম’ নামে একটি প্রখ্যাত লিটল ম্যাগ সম্পাদনা করেন। প্রায় সব কটি বাণিজ্যিক-অবাণিজ্যিক কাগজে লেখা প্রকাশিত হয়েছে।বিভিন্ন ভাষার কবিতার অনুবাদেও তিনি খ্যাতি অর্জন করেছেন। নিজেকে আড়ালে রাখতে পছন্দ করেন । সামাজিক- রাজনৈতিক অবক্ষয়ে সর্বদা গর্জে ওঠা তাঁর কলম এখনো অ-প্রতিরোধী ।সম্ভবত একারণে এবং আরো কিছু রসায়নে অনিচ্ছুক থাকায়, যথেষ্ট প্রতিভাময় হওয়া সত্ত্বেও তাঁর মতো কবিকেও ব্রাত্য হয়ে থাকতে হয়! এ পর্যন্ত তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থাবলি ঃ- পদ্মকোরকের বুক শিশিরে ভেজেনি ১৯৮৩ অছান্দিক মন্ত্রমালা ১৯৯৬ শক্তিমান সুপারম্যান নারদ্রাকাদের দেশে (ছড়া সংকলন)২০০০ অনত্থপদ সংহিতা ২০১৫ শঙ্খলাগা রোদে ২০১৬

মঙ্গলবার, ৩ জানুয়ারী, ২০১৭

দীর্ঘ কবিতা


দীর্ঘ কবিতা

ফিরে যাও অন্ধকার


বাড়ি ফেরো অন্ধকার , আজ অব্দি কতশত আগুন খেয়েও
তোমার ভরেনি পেট, থালা ভর্তি অহংকার যেন অলংকার
উড়ে আসা বৃষ্টিমেঘ মেঠো রাস্তা বেয়ে যেই পৌঁছল এখানে;
তখন সমস্ত দেহে কচি কচি দুব্বো ঘাস গজিয়ে উঠেছে
দিদিমণি রাগি মুখে আঙ্গুল ওঠালো আরকালো হয়ে গেল
মাঠ,মাঠের ফসল ,আর হ্যাঁ ,বেশ কিছু মানী লোকেরাও! ...
আমার সমস্ত রাগ ক্ষমা করে একবার যদি কাছে আস
তোমাকে শোনাতে পারি ভোরের শব্দ বুনে ধৈবত-রেখাবে
তোমাকে দেখাতে চাই হাওয়া৪৯-এর রঙের বৈভবে
কীভাবে জড়িয়ে থাকে সব দ্রোহকাল, শুধু একবার
শিশিরের মধ্যে যদি  অনুভব পেতে পার সমুদ্র-ফেনার...

বৃষ্টিপোড়া নাভি থেকে মেঘালো রঙের কালো ধোঁয়া
উঠতেই বোঝা যায়;সম্পর্কের তার গুলো হিংসা জড়ানো
মেঘ আর মল্লারের মিশ্রণে যে অবিশ্রাম ধারার বর্ষণ হত;
তা আজ লুপ্তপ্রায় সভ্যতার মতো,ইতিহাস বইয়ের পাতায়
তবুও ভোরের গন্ধে এখনো পাগল হয় কিছু শিউলিরা
রসের গোপন ভাষা পড়ে নিতে ঢুকে যায় শীতের ভিতর
পা-য়ে ধরে সাধা তবু রা দিল না রাধা এবং ধারাগোল
ভাষার ভিতর থেকে উঁকি দিল সর্বগ্রাসী দুরন্ত পাগল 
বলে উঠলঃ কবি নাকি ? কবিতা লিখছ বুঝি ? কবিতা এ-সব!
ছন্দ জানো ?ভাষা জানো ? জানো বলে  কাকে রুদ্ধ আর মুক্ত দল?
নদীকে দেখেছ তুমি কত ভাবে ,উচ্চাবচতায় দূর পাহাড় শ্রেণির?
কখনো শুনেছ ফুল ফোটার আওয়াজ আর কান্না গাছেদের ?
নিজের কবিতা পাঠ হবার পরেও কারো কবিতা শুনেছ?
অখ্যাত কারুর বই যত্ন করে কোনও দিন নিয়ে গেছ ঘরে ?
আপনি কে মশাই? সে-ই থেকে আজেবাজে বকে চলেছেন?
ছন্দ জেনে কে কবে বা মহান হয়েছে;বুড়ো ভাম অর্থোডক্স,সমস্ত রাবিশ
ভাষাকে বন্ধন থেকে মুক্ত করে-ই আমরা বিশ্ব-নাগরিক...

ও জোনাকি , কী সুখে ওই ডানা দুটি মেলেছ... শুধু অন্ধকার
মোহগ্রস্ত আমি উপগিরির নির্মাণ ভেঙে রেণু রেণু যেন এই মৃদুল হাওয়ায়
কেউ বলে উঠল ফেরঃ চাটুজ্জে যতই আপনি ভালোই লেখেন কেউ বলবে না কিছু
তখনি সমুদ্রমেঘগর্জালো ভীষণঃ না রাগলে আমি বা কি তৈরি হতাম ?
আমি না জন্মালে বৃষ্টি হত কি কখনো ? সমুদ্র সুন্দর নদী,পাহাড় সুন্দর
সুন্দর ও জলাভূমি ,বন-মরুভূমি ; সুন্দর সমুদ্রঝড়, মধু রুক্ষ হাওয়া
কে এখানে একা একা হয়েছে সুন্দর ; কবি ,তুমি বলে দাও...
আচমকা জেগে উঠে হাই তুললেন
এক বিখ্যাত তরুণঃ কী হচ্ছে মশাই?
চার অক্ষর নাকি সব আমরা এখানে!
যত্ত সব ব্যর্থ বুড়ো কবিতাপ্রয়াসী।
এখানে কোন্দল শুধু কোন রং কার ,
 তুমি কোন শিবিরের ?
ওখানে কোন্দল কারা কত শক্তিমান,
কার জমি কতটুকু?
বারুদের অন্ধকার,শাসকের অহংকার ,
লুটে নিল ইজ্জত মেয়ের 
ব্যর্থ বুড়োরা শুধু ঘরে বসে থাকি,
মোমের মিছিলে হাঁটে প্রতিভাবানেরা 
যেসব লুঠেরা ছিল অন্ধকারের ,
           আজ  তারা সবান্ধবে শরিক  হাওয়ার
পরিণাহে অলংকার সুডৌল গলায় ,
আর সব বানভাসি আকন্দের গাছ
ভেসে যেতে থাকে কোনো অজানার দিকে শুধু
পচনক্রিয়ায় থেমে যেতে
তোমার শিলোঞ্ছভোগী মহাতারকার সঙ্গে মাখা অন্ধকার
গড়াতে গড়াতে চলে গ্রাম ও শহর ছুঁয়ে  সাগর পাহাড়
যত-ই আলোর মালা  পরাবে ওদের আর তত অন্ধকার
তোমার সমস্ত ঘুম কেড়ে নিয়ে চেপে বসবে বুকে বাংলার

এসব দেখেও যদি চুপ করে থাকি ,
মিথ্যে এই কলম আমার
অতটা সুবোধ নই ; পাল্টে যাব ভোল আত্ম-সুখের খাতিরে
অতটা কোমলও নই ;ভয় পেয়ে যাব যদি স্বীকৃতি না মেলে
কোনও অভিসার নয় গোপনে কখনো ,শুধু এ অঙ্গার
ফুঁসে উঠবে চিরকাল,যদি দেখি অত্যাচার
 মাটিতে  আমার
তখন সমস্ত রক্ত বোমা ও বারুদ
কলম তখন তীক্ষ্ণ ধার তলোয়ার
ফিরে যাও অন্ধকার ,ফেরো অন্ধকার ;
অভিজ্ঞতা জ্বেলে রাখছে চেতনা অঙ্গার ...

এই দীর্ঘ বুনে যাওয়া অনত্থপদের
কিছু অংশ যদি মেঘে বিদ্যুতের জাল
এঁকে দিয়ে অন্ধকারে প্রবল ঝলসায়
যদি তা আছড়ে পড়ে আগুন জ্বালায়
তার জন্য এতক্ষণ মস্তিষ্কে ক্ষরণ
তার জন্য বসে থাকা ঊষ্ণ দুপুর
তার জন্য লেখা আজ শুধুই অঙ্গার
ছাই ঘেটে মহাকাল হয় না সবাই
জানি, তবু ঘেটে চলি আমাদের পাপ।           
                     ২৭।০৪।১৪ 






কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন