পর্ব ১
রোদ্দুরে আগুন ছিল পুড়িয়ে ফেলার
তবু দমাতে পারেনি তাকে
কেউ কোনো দিন
খুব ভোর ভোর উঠে ঠাকুর কে জল দিয়ে
উনুন ধরিয়ে
ভাত ডাল তরকারি রান্না করেরেখে ফের
স্বামীকে চা
খাইয়ে চলে যেত রোজ
ফিরে আসত পুর্বী রাগ সঙ্গে নিয়ে-ই
পচে যাওয়া খাল থেকে সবুজ রঙের জলে
মেজে নিত
দোমড়ানো স্টিলের বাসন
পাইপের ফাঁক গলা মিষ্টি জল তুলে
নিত মাটির হাড়িতে
খালের জলের মধ্যে কিছুটা ভিতরে ওর
স্বামী বাঁশ পুঁতে
ছেঁড়া ছেঁড়া চট দিয়ে তৈরি করেছিল
যে কিছুটা আড়াল
তাও আজ যায় প্রায় ,তার-ই মধ্যে
ওরা কাজ সারে
ফিরে এসে হাত ধোয় পা ধোয় হাত-মাটি
করেওই জলে
ঝুপড়ির পাশ দিয়ে চলে যেত৪-৬-১০-১২
চাকার মিছিল
ঘনরাতে ফিরে এসে ভ্যান জমা দিয়ে
হাসি মুখে শ্যাম এসে বসত খাটিয়ায়
বাঁশিতে বাজাত ধুন ফুটপাথ ঘেঁষে
যতক্ষণ না ঘুম এসে ধরে নিয়ে যায়...
একদিন মাঝ রাতে ঘুমের ভিতর
ভয়ানক দৈত্য এল মশাল
জ্বালিয়ে
পরদিন পিষে যাওয়া ঝুপড়ির পাশে এল
অনেক পুলিশ
ওদের-ই ভ্যানে আজ সওয়ারিওরাই!
পর্ব ২
কবিতার মধ্যে আবার গল্প! আমার
না-পসন্দ তবু বেরিয়ে এল আজ
তবে কী করি,কী করি এখন?আমার প্রিয়
ভীষণ প্রিয় গোঁসাইকে শুধোই?
যদি ঢিল মারি দড়াম একটা জগৎবাড়ির
ছাতে তবুতিনিকিসাড়া দেবেন ?
ভাবতে ভাবতে অক্ষরেরা জোনাক হয়ে
এল,বললঃ নিজের মত চল্ না
ভাবনাগুলো আমার থেকে চালাক অনেক
বেশি তারা হাঁটায় বহু পথ
তবু পৌঁছতে দেয়
না সেই হলুদ নদীর ধার যেখানে ওই কাপড় কাচছেন মা
চোরকাঁটারা অলক্ষে মা’র জড়িয়ে ছিল গা-য়ে মা-র জোঁক কে ভীষণ ভয়
বেলা যায় যায় তড়িঘড়ি ভিজে কাপড়গুলো
মা মেলছেন বেড়ার গায়ে গায়ে
ছুটির ঘণ্টা বাজার সাথে ছুট ছুট
ছুট মায়ের কাছেঃ খাবার আছে মা-আ
জ্বর গায়ে মা এগিয়ে দিলেন তার
খাবারের থালা; মা তোমার আছে তো ?
আমার চুলে হাত বুলিয়ে হেসে বললেনঃ
যাআ , যা তো,এখন পাকামি করিস না
ফের গল্প গল্প আবার
কী হচ্ছে আজ সব! মেঘ- লিখতে বাদুড় ঝোলা
গাছ
সন্ধ্যার চুল ছড়িয়ে গিয়েএগিয়ে গেছে
অনেক রক্তচোষা গাছের থেকে নেমে
ঢুকে পড়ল কাদের ঘরে, কেউ যেন না
বেরোয় কাল, কষা মাংস রাঁধুন ভাল করে
নিজেরা খান,টিভি
দেখুন,মার্ক্স-লেনিন-এঙ্গেলসকে ঘরের মধ্যেই রাখুন
-এসব আমরা শিখেছি সব আপনাদের-ই
থেকে,বলুন ছাত্র ভালো কী না ?
তাঁর ঠোঁটেতে জয়ের রেখা সুবোধ
মুকুল পায়ে;
রবীন্দ্রনাথ খেই হারালেন ট্রাফিক সিগন্যালে!
পর্ব ৩
বাংলা খাব বাংলা পড়ব বাংলা মুড়ি
দিয়ে আলপথে মাঠে যাব রোজ
বাংলা বলব বাংলা শুনব বাংলা দিয়ে
রং খেলব অবনঠাকুর মাঠে
সেখানে বাওয়াল হবে, ক্যাচরা হবে,হুইস্কি-রামও
হবে বাংলায়
তারপরেই বিবেকানন্দ রবিঠাকুর মা
সারদার থানে হুল্লোর
বাংলা জাগে,জাগে বাংলা ,একটু একটু
করে রোজ ভোর ও সন্ধ্যায়
বাংলা বার্গার হবে সেসার ভায়েহো হবে
পুস্তকমেলার চত্বরে
বাংলা কুয়াশা থেকে ভেসে উঠবেন
একটু একটু ঈশ্বর গুপ্তেরা
সুবোধ কবিতা হবে, তিন- পাঁচ - চার
অক্ষর হবে বাংলায়
রবীন্দ্রসদন হবে বাংলা আকাদেমি
হবে জীবনানন্দ সভাঘরে
বর্ষা-ফেসিয়াল হবে ছোট-বড়
ঘাস হবে রোগা-মোটা বাংলা অক্ষরে
নির্বাসিত হতে হবে
কবিপক্ষে, কবিতা উৎসব থেকে দূরে
বাংলা সোনার হবে একদিন
অন্যের দেয়াল ভিজিয়ে রোদ্দুরে !
পর্ব ৪
গা গুলোনো গরম থেকে
অব্যাহতি দিতে আজ বৃষ্টি এসে হাত ধরেছিল;
ধরেছিল কিছুক্ষণ, কিন্তু
তাতেই কেলো;হেঁচকি তুলে দুমদাম রোদ্দুর দাঁড়াল।
ফোঁটাগুলো মদালসা, গাল
বেয়ে টুপ টাপ যে রকম ১ম ১ম
উস্কে দিয়ে চলে যাওয়া
আদরের ছল, বোঝ তুমি,চাতক চাতক..
আমার যে সব নিতেই হবে
সেতো সবাই জানে
দিতে আমার হবেনা
কিছুই!
তুমি বুড়ো হেঁদিয়ে মর অ-শান্তি
নিকেতনে, বলঃ চাতক চাতক...
কবির দল জমা হচ্ছে রবীন্দ্র সদনে
, বুড়ো দেখতে পাচ্ছ?
শুনতে পাচ্ছ গান বাজছে ট্রাফিক
সিগন্যালেঃ ‘ রবি ঠাকুর মাঈকি...’
বুড়ো শুনতে পাচ্ছ?
পর্ব ৫
আমার সমস্ত জানালা করেছি উষ্ণীষ
যত দূর দেখা যায় শুধু কালো মেঘ
ওই মেঘ গুলো যেন এখন বালিশ
রাত বাড়লে, প্লিজ তোরা আমাকে শুতে
দিস
যত কথা জলে ধোয়া যত শব্দ কানে
সব শোনা যাচ্ছে আজ তা চা-এর
দোকানে
আমি যেন লেগে থাকা একদানা ভাত
এখনো হয়নি ভোর, আমার প্রভাত
কাল এসে বলে ছিলঃ চল্ রে ডাকাত
আমার সমস্ত দরজা বাস্তিল বাস্তিল
ঠোঁটে তুলে নিয়ে যায় যেন অন্ধকার
‘আলো জ্বালো একবার’;- বলে ওঠো ‘কে?
কোন রোষে এইখানে ফেলে গেল চিল !’
সব শোনা যাচ্ছে আজ,শোনা যাচ্ছে সব
আশ-পাশে আছে সব লুকোনো ভৈরব
তারা সব সার সার মোটরসাইকেল
যে রঙের-ই হোক,এই রাস্তা মাটির
দু’একটা মোষ,তার কাদা মাখা গা
শিং তুলে ছুটে এসে ছেটাচ্ছে আবির
পবিত্র কুর-আন গীতা গ্রন্থসাহিব
বাইবেল
হাতে নিয়ে নেমে এসেছেন শুধু
খালি-পা
এলো চুল,তিন দিন না-কামানো দাঁড়ি
বলে উঠলঃ ‘আমি একবার ছুঁয়ে দেখতে পারি?
তারপর স্বপ্ন জুড়ে বুটের আওয়াজ
তারপর মাটিরং একলা বাড়িটা
বলে উঠলঃ ছন্নছাড়া, তবু যদি ভাবি
আরেক কালবৈশাখীকে ডেকে নিতে পারি।
ধরো, সে বাড়ির মধ্যে বসে আছ তুমি
ধরো,সার সার রোগা, কঙ্কালশার
কোটি মানুষের বাস ঐ বাড়িটাতে।
ওরা এল লাঠি হাতে, তবুও অতিথি
ভেবে রুটি ,জল দিল,দিল ওরা শুতে!
তখন ছিলে না, কিন্তু এখন শাসক
শাসকের মা বাবা বোন থাকতে নেই
শাসকের ঘর-দোর পুরোটা চেয়ার
এসব জানত না সে একলা বাড়ি যে
ঝলসে গেল ছাল-চামড়া , ঝলসালো হাড়!
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন