আমার সম্পর্কে

আমার ফটো
kolkata, west bengal, India
৭০ দশকের এক অগ্রগণ্য বিশিষ্ট কবি। জন্ম-২৭ডিসেম্বর ১৯৫৩। জন্ম- কলকাতার দর্জিপাড়া ম্যাটারনিটি হোম।বসবাস-নিমতা। সাহিত্যের সব কটি শাখায় পারদর্শীতা আছে।অনুবাদ করেছেন বিভিন্ন ভাষার কবিতা। ছন্দ ও ছন্দহীনতায় সমান ব্যুৎপত্তি।পুরাণ,দর্শন,সমাজতত্ত্ব,ইতিহাস,বিজ্ঞান,সবকিছুই উঠে এসেছে তাঁর লেখায়। ‘সৌহার্দ্য সত্তর’,এর হয়ে প্রতিবেশী বাংলা দেশে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে ভ্রমণ করেছেন।তাঁর দীর্ঘ কবিতার সংকলন “ অনত্থপদ সংহিতা” ২০১৫ এর বিভূতিভূষণ স্মৃতি পুরস্কার –এ সম্মানিত হয়েছে। বহুদিন ধরে লিটল ম্যাগাজিনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে নিজেকে যুক্ত রেখেছেন।‘ ক্লেদজ কুসুম’ নামে একটি প্রখ্যাত লিটল ম্যাগ সম্পাদনা করেন। প্রায় সব কটি বাণিজ্যিক-অবাণিজ্যিক কাগজে লেখা প্রকাশিত হয়েছে।বিভিন্ন ভাষার কবিতার অনুবাদেও তিনি খ্যাতি অর্জন করেছেন। নিজেকে আড়ালে রাখতে পছন্দ করেন । সামাজিক- রাজনৈতিক অবক্ষয়ে সর্বদা গর্জে ওঠা তাঁর কলম এখনো অ-প্রতিরোধী ।সম্ভবত একারণে এবং আরো কিছু রসায়নে অনিচ্ছুক থাকায়, যথেষ্ট প্রতিভাময় হওয়া সত্ত্বেও তাঁর মতো কবিকেও ব্রাত্য হয়ে থাকতে হয়! এ পর্যন্ত তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থাবলি ঃ- পদ্মকোরকের বুক শিশিরে ভেজেনি ১৯৮৩ অছান্দিক মন্ত্রমালা ১৯৯৬ শক্তিমান সুপারম্যান নারদ্রাকাদের দেশে (ছড়া সংকলন)২০০০ অনত্থপদ সংহিতা ২০১৫ শঙ্খলাগা রোদে ২০১৬

শুক্রবার, ৬ জানুয়ারী, ২০১৭

স্বপ্ন দেখা জলে

স্বপ্ন দেখা জলে

তখন হাতের সামনে শুধু এক নোংরা বওয়া নদী
সেই জলে স্বপ্ন দেখা,সেই জলে আমার শর্বরী
আমার গোপন অঙ্গে গা এলিয়ে মৃদু বলে ওঠেঃ
এখনো সমর্থ আছো ! ছবি আঁকছ, দেখি আকছার   
তোমার  ও  সৃষ্টি-দেশে রেখে দিচ্ছি আমার সংসার


আমি যে নিদাঘ প্রিয়, উষ্ণ দেশে জন্মেছি যেহেতু   
আমার শরীর ভরা নুন শুধু; নুন আর নুনের পাহাড়  
তা ডিঙোতে পার যদি, নিয়ে যেতে পারি সেইখানে
যেখানে বল্মীক মধ্যে ঢেকে যায়  অনাবৃত পুরোটা শরীর
যেখানে গুহার মধ্যে হিম থেকে জন্ম হয় আগুন নদীর
সাগরদাড়ির থেকে  কপোতাক্ষ নদীজলে ডুবে উঠে ভেসে 
ছুঁয়ে যেতে পারি ভাঙা লাল শালিখের ডানা শঙ্খচিলের ছদ্মবেশে ।





বন্য ঘোটকী

বন্য ঘোটকী

[অন্ধকারে ছোঁড়া ঢিল লক্ষগুণ শক্তি নিয়ে ফিরে এল উঠোনে আবার
ফুলে উঠল জলরাশি,দুলে উঠল বহুতল,ঝালাঅঙ্গদ্যুতিতে ত্রিতাল
পাল্লা দিচ্ছে তরঙ্গের মুহূর্মুহূ অভিঘাতে ,আঙুলেরা এতই  চপল ! ]


আজ থেকে ধরা যাক ৩৬৩তম পুরুষের  আগে  এক  দুপুর বেলায়
৮০তলা গাছেদের ঘিরে থাকা কোনো এক উপলখণ্ডকে কাছে পেয়ে
পাথর-কুড়ুল আর নিজেদের ধনুর্বান ,পাতার পোশাক  খুলে রেখে ,
বাছুরের ঝলসানো মাংস আর সোম নিয়ে বসে পড়ল  সে যুগের প্রেমিক-যুগল...   
সোনার উজ্জ্বল রং দুজনার খোলা চুল হাওয়াতে ছড়িয়ে দিয়ে কাছে ঝর্নায়
ঘন হয়ে মিশে গেল পিঙ্গল বর্ণের দেহ ;সাক্ষী থাকল  শুধু বন,নদী ও পাহাড়
ছেলেটি সে পুষ্পধন্বা ,মেয়েটির নাম রতি;ভাই-বোন, যাকে ঘিরে প্রকৃতি উত্তাল  !
ভোল্গার তট ছঁয়ে চঞ্চলতা  উঠে এল জন-দম* মধ্য থেকে  ছড়াল হাওয়ায়  
এখানে নারীরা কারো অধিকারভুক্ত নয় ; বুনো ঘোটকীর মতো দুরন্ত, স্বাধীন  
সন্তানেরা সকলেই দেবত্বের অধিকারী ,ব্রহ্মাণী-জনের অংশ, পবিত্রতা অগ্নিশিখার ...


(* জন-দম = যৌথ বাসগৃহ )



দুযশ পিরিতি আশ


দুযশ পিরিতি  আশ


ফেরানো সে মুখ দেখে চিনেছে লহমায় চির- বসন্তের জটিল মাস  
ভুখল গুপুত প্রেম   হঠাৎ জেগেছিল ধএলহ দুযশ পিরিতি আশ
তবু সে কাদায় মাখা মুখটি ভেসেছিল গাঘেষে বসেছিল যখন তার
কেঁপে উঠেছিল দেহ ,শরীর পুড়ছিল,কান্না থমকে আসা মেঘের ভার  
তখনি আকাশ থেকে চমকে উঠেছিল মেঘে ও বিদ্যুতে ঝনাৎকার
বাইক আরোহী শ্যাম পালিয়ে বেঁচেছিল উধাও হয়েছিল ভুখল আশ


ননুঞ বদনী তেঁহ রসহু পসারল  উরজ সিরিফলে গলয়ে কাম
একালের রাধিকে গো, চাপাপ্যান্ট গেঞ্জিতে হেরেছে সেকালের ভাবিনী দাম   
ফান্দে পড়েছি মুই হেরিতহি ঐ রূপ ফুটছে আধো- আধা  ব্রজের বোল
তা দিয়ে প্রেমের ঘর বানাতে গিয়ে আজ পরকীয়াতে মজে গাই হিন্দোল !   




·          ভুখল ক্ষুধিত, গুপুত- গুপ্ত,ধএলহ-রাখিলে,দুযশ-দুর্যশ ,  ননুঞ বদনী- কোমল বদনী,তেঁহ-তাহাতে ,রসহু-রস,পসারল-বিস্তার করল,উরজ-স্তন,সিরিফল-শ্রী ফল,গলয়ে-ঝরছে, 


  

বন্দী ছড়ার গান

বন্দী ছড়ার গান


অন্ধ আকাশ মেঘের কাছে  চাইতে গেলাম বর
মা বলল খোকন সোনা,এবার শুয়ে পড়
মেঘ ডাকল আয় কাছে আয়,দিচ্ছি ফোটা ফোটা
মধুর সমান জলের ধারা ,মুক্তো গোটা গোটা   

রাত বেড়ে যায়, ঘুম  আসে না, হঠাৎ ডাকে পাখি
মেঘের কোলে মুখ লুকিয়ে সুর্য দিল উঁকি
মাথার উপর জানলা দিয়ে দেখি পাতার ঘর
একটা চড়ুই দেখতে পেলাম অনেকদিনের পর  

কাচবন্দী বাইস তলায় বন্দী আমি একা
আন্টি এসে বকে শুধু, পাচ্ছিনা মার দেখা  
অন্ধ আকাশ ঝলক দিচ্ছে ,বলছেখোকা, পড়
আমি শুনছি মায়ের ডাক খোকা, শুয়ে পড়




২৬.০৬.২০১৫ (শুক্র বার) রাত- ১১.১৫ 


বৃহস্পতিবার, ৫ জানুয়ারী, ২০১৭

বেলুন

বেলুন 


(১) 

আমার যৌনতা দেখি উড়ে যাচ্ছে ট্রাউজারবিহীন
উত্তরভারত হয়ে উত্তরপূর্বের কোনও দেশে;
মহান কবির খোঁজে পাঠহেতু ঝুলে আছে হুকে।
(ধরে নিন কালু বসে কদমের ডালে, ঝারি করছে স্নানরতাদের...)
প্রগতির অহংকার কালো হয়ে মিশে যাচ্ছে যমুনার জলে!

আমার বাঁদিকে যারা রত্নাকর, দ্বৈপায়ন এবংবিধ ভাবে বর্তমান
শুনেছি তাঁদের কথা শিষ্ট ছাত্রের ভাবাবেশে
এবং ডাইনে যাঁরা; লিঙ্গশরীর হয়ে, বেলুনের মতো ভাসমান
খুঁজতে তাঁদের মুখ, পা-গুলোই বড় হয়ে ভাসে।


(২) 

মরে যাচ্ছি ‘ক’ লিখতে; মেঘ এঁকে ফেললাম খাতায়
তখন দোয়াত ছিল, এখন তা মেঘের সামিল
মাস্টারের কথা মতো ‘ম’ লিখতে ‘মাইরি’ লিখেছি
‘ব’ লিখতে অসভ্যের অন্য কোনো শব্দ মনে আসে
এ হচ্ছে বঙ্গদেশ, ‘মা’ বললে মাসি মনে ভাসে! 





ছড়াক্কা

মহাকাব্য জন্মকথা


তাঁরা দুজন আছেন বসে মানাগ্রামের গুহায়
         চোখ বন্ধ , চুপ চারদিক
         সামনে তালপাতা তাঁর 
        দোয়াত,পালক ও ঠিক
        পাখি ঊড়ছে না আর
নাচিয়ে ভুঁড়ি তৈরি তিনি চার হাত তালপাতায়



যেতে হবে গড় গড়িয়ে  থামলে একটু চলবে না 
        বুঝলে তবেই লাখা যাবে
       এমন ওদের বোঝাপড়া
      জটিলতর শ্লোকের ভাবে
     চার হাতে তাঁর ঝড়ের সাড়া
পাতার উপর পড়ছে পাতা ,লেখা একটু থামছে না!


ভাবছেন আর ভাবছেন , ভুরু কোঁচকানো ,উড়ছে দসাদা দাঁড়ি
               কথা থামছে না একটুও
             দুহাত আর একজনের
             চুলের ভিতর বেড়িয়েও
            মানে খুঁজে খুঁজে ফের
লিখছেন আর লিখছেন ,না থেমেই কক্ষণো,পাতা জমছে কাঁড়ি


ছড়াক্কা



বাঘের বাচ্চা

রোদ্গুলো আজ ঝাপিয়ে পড়ল বাচ্চা বাঘের মতো ডেকে--হালুম-হুলুম
                  হেতালপুরের গরীবগুর্বো আহ্লাদে চৌষট্টি
                  উড়ছে মানুষ ফানুস যেমন ,ওধার থেকে বৃষ্টি
                  কাঁপিয়ে এল মুষল ধারায় হঠাৎ অনাসৃষ্টি
                  ডুবল পুকুর,বাঁধ ভাঙল , মুদিখানার গুমটি
জল ভাসি সব বানের তোড়ে আচ্ছা কপাল যত , এবার হচ্ছে মালুম 



কারসাজি

কাঁদেনাকো ছিঃ ছিঃ লক্ষী আমার, ভালো করে শেখ  বাংরেজি
                দুপুর বেলা ঝমঝমিয়ে আকাশ প্রজাপতি        
                রোদ আকছে আলপনা তার এসে খাতার পর 
                বাবা গেছেন দপ্তরে তাঁর মা পড়শির ঘর
                সে শিখছে বাংলা মায়ের ভ রা আলোকদ্যুতি  
হেসোনাকো ছিঃ ছিঃ দুষ্টু তোমার বের করে দেব কারসাজি    



                

বুধবার, ৪ জানুয়ারী, ২০১৭

নিবন্ধ------চতুর্দশপদী সম্পর্কে দু-চার কথা ; যা আমি বুঝতে চাই



চতুর্দশপদী সম্পর্কে দু-চার কথা ; যা আমি বুঝতে চাই  
যখন  কবিতায় শুরু কিম্বা শেষ কিম্বা মধ্যভাগ বলে  কিছুই থাকবে না। কবিতা যেখান থেকে খুশি পড়া যাবে। আগের পঙক্তির সঙ্গে পরের পঙক্তি কোনও সম্পর্ক থাকবে না । থাকবে না বিষয়বস্তু। কোনো অর্থ ছন্দ-বন্ধন তো একেবারেই অচ্ছ্যুৎ।  থাকবে যা; তা হ: অব্যস্থিত ,লেখক-ইচ্ছার এলোমেলো স্বগত কথন ইত্যাদি ইত্যাদি ......... এই যখন একালের কবিতার পরিভাষা এবং কবিতার জগতের এই যখন অধুনা, প্রায় সর্বব্যাপী চাল-চিত্র , সে সময়ে বন্ধুবর উৎপল  ত্রিবেদীর সনেট নিয়ে লেখার আহ্বান আমাকে স্তব্ধবাক করে দিল। একেতো আমার মতো এই চূড়ান্ত অশিক্ষিত , চূড়ান্ত অ-কবির উপর এই গুরু দায়িত্ব অর্পণ , বন্ধুকৃত্যের প্রতি একটু বেশি পক্ষপাত দুষ্ট বলেই আমার ধারণা।তবু চেষ্টা করা যাক , বিষয়টাকে একটু ঝালিয়ে নেওয়ার।পণ্ডিত পাঠকের কাছে তাই আগে-ভাগে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।
সনেট(Sonnet) ল এক প্রাচীনতম কাব্যিক আঙ্গিক ,যা নিয়ন্ত্রিতএবং স্থায়ী। ইতালিয় শব্দ সনেত্তো Sonetto(অর্থ- মৃদু সঙ্গীত) থেকে এর উদ্ভব।  ত্রয়োদশ শতাব্দীতে গিয়াকোমো দ্য লাতিনি বা লেন্তিনি ( Giacomo de Lentini)  এর উদ্ভাবক যা পেত্রার্ক( Francesco Petrarch)এর মাধ্যমে  প্রতিষ্ঠা পায়।এর পরে মহান ইংরেজ কবি শেক্সপীয়র অনুপ্রাণিত হয়ে অধুনা প্রচলিত চতুর্দশপদী সনেট রচনা করলেন। যাকে পাঁচ মাত্রার কাব্য (Iambic pentameter)বলে অভিহিত করা হয়েছে। 
এটি এমন এক কাব্যিক ফর্ম যা সুসংহত ভাবে আঁটো-সাঁটো ছন্দে আবদ্ধ থাকবে এবং থাকবে সাংগীতিক অনুরণন; যা নৈঃশব্দতা ও একাগ্রচিত্ততায় পাঠের দাবী করে থাকে। যা দুটো অংশে বিভক্ত ।১) পূর্বপক্ষ বা উপস্থাপনা২) অনুবন্ধ বা অনুবৃত্তি।অর্থাৎ প্রথম   প্রস্তাবনা  অংশটিকে দ্বিতীয় পর্যায় বা অংশে একটা ঘূর্ণন বা গতি দ্বারা বিভাজিত করে দ্বিতীয় অংশে একটা সমাধান বা সম্পূর্ণ নতুন কিছুর অবতারণা । এই দুটি বিভাগ অষ্টক ও ষটক এ বিভক্ত। যা Guittone (১২৯৪খ্রিঃ) দ্বারা নির্দেশিত। এই দুই বিভাগ আবার মাত্রা সংখ্যা কেউ কেউ আবার মান্য না করে স্বীয় দক্ষতা দিয়ে তা অন্যভাবে উপহার দিয়েছেন।সে প্রসঙ্গে আমরা পরে আসব , এখন প্রচলিত মূল গঠনপ্রণালীটি একটু দেখে নেওয়া যাক।
ক) লাইন সংখ্যা---- ১৪
খ) পঁচস্বরাঘাতযুক্ত চরণবিশিষ্ট কবিতা বা Iambic pentameter  
গ) চরণে চরণে মিলের প্রকৃতি ঃ---
      পেত্রার্কীয় গঠন প্রণালী       ----- কখখক  কখখক     গঘঙগঘঙ  অথবা  কখখক  কখখক  গঘগঘগঘ   
      শেক্সপিয়রীয়ান গঠন প্রণালী-----  কখকখ  গঘগঘ  ঙচঙচ  ছছ 
পেত্রাকান চতুর্দশপদীতে প্রথম স্তবকে ৮লাইন (Octave)  এবং পরবর্তী স্তবকে ৬ লাইন (চূড়ান্ত ৬ লাইন)(Setset) এই দুভাগে ভাগ করা  হয়েছে।আর শেক্সপীয়রিয়ান চতুর্দশপদীতে তিনটে ৪লাইনের স্তবক আর তারপর একটা দ্বিপদী । কিন্তু দুই পদ্ধতিতেই এক-ই রকমের একটা ঘুর্ণন বর্তমান। যাকে ভোল্টা মার্ক্স (Volta marks) যাকে অন্তিম বা চূড়ান্ত পরিণতির দিকে অগ্রসরমানতাও বলা যায়। এবার মোটামুটি ভাবে বাংলায় পেত্রাকান রীতি মানা একটি কবিতার উদাহরণ তুলে দেওয়া যাক। কবিতাটি বুদ্ধদেব বসু র।রবীন্দ্রনাথের প্রতিকবিতাটিতে অষ্টক ও ষটক ব্যবহৃত হয়েছে এই ভাবেঃ
তোমাকে স্মরণ করি আজ এই দারুণ দুর্দিনে         (ক)
হে বন্ধু, হে প্রিয়তম। সভ্যতার শ্মশান শয্যায়         (খ)
সংক্রমিত মহামারী মানুষের মর্মে ও মজ্জায়;          (খ)
প্রাণলক্ষী বির্বাসিতা ! রক্তপায়ী উদ্ধত সঙ্গিনে        (ক)
সুন্দরেরে বিদ্ধ করে, মৃত্যুবহ পুষ্পক উড্ডীন        (ক)
বর্বর রাক্ষস হাঁসে, আমি শ্রেষ্ঠ, সব চেয়ে বড়ো।  (খ)
দেশে-দেশে সমুদ্রের তীরে তীরে কাঁপে থরো থরো (খ)
উন্মত্ত জন্তুর মুখে জীবনের সোনার হরিণ ।             (ক) 

প্রাণ রুদ্ধ, প্রাণ স্তব্ধ।ভারতের স্নিগ্ধ উপকূলে           (গ)
স্তব্ধতার লালা ঝরে। এত দুঃখ, এ দুঃসহ ঘৃণা--     (ঘ)
এ নরক সহিতে কি পারিতাম,হে বন্ধু,যদি না           (ঘ)
লিপ্ত হতো রক্তে মোর,বিদ্ধ হতো গূঢ় মর্মমূলে        ( গ)
তোমার অক্ষয় মন্ত্র। অন্তরে লভেছি তব বাণী            ( ঘ )
তাইতো মানিনা ভয়, জীবনের জয় হবে জানি ।        (ঘ)        
এই  কবিতার প্রথম অষ্টকে পেত্রাকান রীতিতে ক খ খ ক ক খ খ ক  মানা হয়েছে কিন্তু  অন্তিম স্তবকে পেত্রাকান রীতি সামান্য প রি বর্তিত হয়েছে এবং তাতে চতুর্দশপদীটির  কোনওই হানি হয়নি। এইবার শেক্সপীয়রিয়ান রীতি অনুযায়ী  লিখিত বাংলা কবিতার উদাহরণ পেশ করা যাক। আমরা বেছে নিচ্ছি সুধীন্দ্রনাথ দত্তের মহাসত্য  কবিতাটি।      
অসম্ভব, প্রিয়তমে, অসম্ভব শাশ্বত স্মরণ;                 (ক)
অসংগত চিরপ্রেম;সংবরণ অসাধ্য,অন্যায় ;              (খ)
বন্ধদ্বার অন্ধকারে প্রেতের সন্তপ্ত সঞ্চরণ                    (ক)
সাঙ্গ করে ভাগীরথী অকস্মাৎ বসন্তবন্যায়।।             (খ)

সে মিলন অনবদ্য, এ-বিরহ অনির্বচনীয়                    (গ)
ধ্বংসসার স্বপ্নস্তুপে অচিরাৎ হারাবে স্বরূপ;                (ঘ)
আশা আজি প্রবঞ্চণা; দিব না স্মারক অঙ্গুরীয় ;           (গ)
ব্যবধি ব্যাপক জেনে অঙ্গীকার নির্বোধ বিদ্রূপ।।        (ঘ)

তবু  রবে অন্তঃশীল স্বপ্রতিষ্ঠ চৈতন্যের তলে              (ঙ)
হিতবুদ্ধিহন্তারক ক্ষণিকের এ-আত্মবিস্মৃতি;                (চ)
তোমারই বিমূর্ত প্রশ্ন জীবনের নিশীথ বিরলে             (ঙ)
প্রমাণিবে মূল্যহীন আজন্মের সঞ্চিত সুকৃতি।।           (চ)

মৃত্যুর পাথেয় দিতে কানা কড়ি মিলিবে না যবে ,      (ছ)
রূপান্ধ যুবার ভ্রান্তি সেই দিন মহাসত্য  হবে ।।          (ছ)

এই চতুর্দশপদীটিতে কবি হুবহু শেক্সপীয়রীয় রীতি কে মান্যতা দিয়েছেন । স্তবক বিভাগ থেকে চরণের মিল পর্যন্ত। অন্তিম দুলাইনে সেই ঘূর্ণন। উপসংহার । চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের প্রয়োগ। যাকে Volta marks বলা হয়ে থাকে ।
এতক্ষণ আমরা ইতালিয় ও ইংরাজী সনেট নিয়ে কপচালাম । মোটামুটি ভাবে আমরা জানতে পারলাম যে ; ইতালিয় চতুর্দশপদীতে অষ্টক (Octave) এসে ষটকের মধ্যে ঢুকে যেতে পারে । তাতে নানা বৈচিত্র্য ও লক্ষ করা যায়।তা চোদ্দ পংক্তি থেকে পনেরো, আঠেরো কিম্বা হ্রাস পেয়ে বারো পংক্তির ও হতে পারে ।বিষয় হিসেবে তাতে যেমন ধর্ম  আছে , তেমনি ; সমাজ,দর্শন ইত্যাদিও বর্তমান।  তবে শেক্সপীয়রের সনেটে : বিরহকাতরতার বেদনা, প্রিয়ার অপরূপ সৌন্দর্য, হৃদয় বিনিময় , মৃত্যু ভীতি, কবির উপরে যুগের প্রভাব, কালের অবক্ষয় ইত্যাদি লক্ষ করা যায়। ইতালিয় সনেট-কে দান্তে এবং পেত্রার্ক ই যেমন সর্বাপেক্ষা বেশি প্রভাবিত করেছেন ; তেমনি, ইংরেজি সাহিত্যে সনেট প্রথম লিখেছেন স্যর টমাস ওয়াট ও হেনরি এডওয়ার্ড। এছাড়াও ইংরাজি সাহিত্যে বহু সনেট লিখিয়ে আছেন।যেমন; এডমান্ড স্পেন্সারতিনি  তাঁর নতুনত্বের জন্য বিখ্যাততা সত্ত্বেও  কিন্তু আমাদের হৃদয় দখল করে বসে আছেন একজন-ই। তিনি স্বয়ং শেক্সপীয়র।একটা কথা বলে রাখা প্রয়োজন যে ত্রয়োদশ শতাব্দীতে ইতালিয় সনেটের উদ্ভাবক হিসেবে গিয়াকোমো দ্য লাতিনি বা লেন্তিনি ( Giacomo de Lentini) কে বলা হলেও এর একটা ভিন্নমতও বর্তমান। এবং সেই মতানুসারে পিয়ের দেল্লে ভিন্ নিয়ে  হলেন  সনেটের আদি জনক। এরপর যথাক্রমে ; গিয়াকোমো দ্য লাতিনি বা লেন্তিনি , গুইদোঁ কাভাল কান্তি , গুইত্তোনে দারেৎ সো এছাড়াও আরো অনেকে। তবুও দান্তে তাঁর ভিটা ন্যুভা কাব্যে , প্রেমিকা বিয়াত্রিচের প্রতি যে গভীর প্রেমের অভিব্যক্তি  দেখিয়েছেন এবং পেত্রার্কাও তাঁর প্রেমিকা লরা কে নিয়ে লেখা সনেটগুলোতে তাঁর অনন্যসাধারণ প্রতিভার দ্বারা যে এক অপরূপ শৈলীর নির্মাণ করেছেন, তা  চিরস্মরণীয়। এইসঙ্গে ফরাসি সনেট নিয়ে কিছু না বলাটা বোধ হয় সঠিক হবে না। সুতরাং  দু চার কথা  বলতেই হয়। ফরাসি সনেটের বিষয়ে আমরা প্রথম আলোকিত হয়েছি প্রমথ চৌধুরীর মাধ্যমে। ষোড়শ শতকে   ক্লেমঁ মারো-এর কাছ থেকে আমরা প্রথম সনেট পাই। ফরাসী সনেট ও পেত্রার্কান সনেটের মতোই , তবে এতে কিছু ভিন্নতাও বর্তমান। এর অষ্টক গুলো দুভাগে বিভক্ত। এক-একটি চতুষ্কে এক-একটি স্তবক। পদান্ত্যমিল- বিন্যাসটি হল এ রকম;-- কখখক,  কখখক এবং ষটকে ;- গগঘ,ঙঙঘ । এভাবে হয়তো কিছুই বোঝানো গেল না, তবু সামান্য একটু ধারণা পাওয়ার প্রচেষ্টায় একটা প্রয়াস মাত্র
এবার আসি  বাংলা সনেটের কথায়। এবং তা বলতে কবিগুরুকে অস্বীকার করবে কে? তিনি সনেট কে তাঁর নিহস্বতায় এক নতুনতর  রূপে ফুটিয়ে তুলতে গিয়ে আঙ্গিকে বেশ কিছু পরিবর্তনের চেষ্টা করেছিলেন। ৮+৬,১০+১০,৮+৮ ,৮+১০ মাত্রায় লেখা দ্বিপর্বিক চরণে লেখা সনেটের সংখ্যা নেহাৎ কম নয়। রবীন্দ্রনাথ শেক্সপীয়রিয়ান রীতিকে কে যেমন স্বীয় স্বাতন্ত্র্যে রাবীন্দ্রিক করে তুলেছিলেন ঠিক তেমনি ভাবেই মধুকবি তাঁর নিজস্বতায় পেত্রার্কান রীতিকে মধুসূদনীক করে তুলেছিলেন ।  বলা যেতে পারে রবীন্দ্রনাথ সনেট লিখলেও বাংলায় তার নতুনতর জন্মদান করেছেন মাইকেল মধুসূদন দত্ত। তাঁর নিন্মোক্ত চতুর্দশপদীটিকে ভূদেব চৌধুরী এক নতুনতর  শিল্পের উদাহরণ হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন। এবার কবিতা টি দেখা যাকঃ-
হে বঙ্গ ভাণ্ডারে তব বিবিধ রতন  ;-   
তা সবে( অবোধ আমি)  অবহেলা করি ,.....   এই চতুর্দশপদীটি পড়েন নি এমন মানুষ সম্ভবত এই বাংলায় কেউ নেই , সে জন্য জায়গা বাঁচাতে পুরো কবিতাটি উল্লেখ করলাম না। কিন্তু যেটা বলার এবং ভূদেব চৌধুরী যা সমর্থন করেছেন তা হল ;- পদান্ত্যমিল বিন্যাসে চতুর্দশপদীটি পেত্রার্কান হলেও (ক খ ক খ ক খ ক খ গ ঘ ঘ গ ঙ ঙ ) হলেও তা থেকে ভিন্ন । বাংলায় প্রচুর সনেট লেখা হয়েছে ,এবং একালেও লেখা হচ্ছে এবং হয়তো ভবিষ্যতেও কেউ কেঊ লিখবেন। দেবেন্দ্রনাথ সেন, বিহারীলাল চক্রবর্তী,অক্ষয় কুমার বড়াল, প্রমথনাথ চৌধুরী, সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত , মোহিতলাল মজুমদার থেকে আরম্ভ করে বুদ্ধদেব বসু,সুধীন্দ্রনাথ দত্ত,বিষ্ণু দে ,
জীবনানন্দ দাশ থেকে শুরু করে সুভাষ মুখোপাধ্যায়, রাম বসু, রমেন্দ্রকুমার আচার্য চৌধুরী , নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী,শক্তি চট্টোপাধ্যায়,শঙ্খ ঘোষ,পবিত্র মুখোপাধ্যায় ,উত্তম দাশ, পার্থপ্রতিম কাঞ্জিলাল, প্রমুখ কবিরা এই বিষয়ে প্রচুর চর্চা করেছেন এবং আরো বহু কবি  আছেন,তাঁদের মধ্যে  জয় গোস্বামী , মৃদুল দাশগুপ্ত উল্লেখ্য। এছাড়াও গৌতম চৌধুরী, গৌরশংকর বন্দ্যোপাধ্যায়,শংকর চক্রবর্তী,উজ্জ্বল সিংহ,শ্যামলকান্তি দাশ ,বিশ্বনাথ গরাই,যশোধরা রায়চৌধুরী,মন্দাক্রান্তা সেন-এর মতো কবিরা বিক্ষিপ্ত ভাবে কিছু সনেট রচনা করেছেন। আরোও বেশ কয়েকজন কবি ,যাঁরা সুগভীর ভাবে এবিষয়ে অনুধ্যান করেছেন ,তাঁদের সংখ্যাও নিতান্ত কম নয়।  যাঁদের নাম এখানে উল্লেখ করা সম্ভব হল না ,তাঁদের অবদানকে স্বাগত না জানানোর কোনো অভিপ্রায় এই নিবন্ধকারের নেইকিন্তু পরিসরের কথা ভেবে সংযত থাকতে হল।এবার এ-সময়ের সর্বাধিক আলোকিত ৭০ দশকের দুই কবির সনেট এর উদাহরণ দেওয়া যাক। প্রথমে শুরু করা যাক জয় গোস্বামী ক্রিশমাস ও শীতের সনেট গুচ্ছ থেকে একটা কবিতা দিয়ে :-------    
সম্পূর্ণ ক্ষুধার নীচে বালি আর সোরা আর গন্ধকের গৃহ---        (ক)
অক্ষরে করুণ ঘণ্টা আর ক্ষীপ্র করে তুলে কিরণক্ষমতা           (খ)
রে নিতে প্রক্ষেপণে, তুমি কি সমস্ত শেষে আমাকে সমীহ      (ক)
করাই মনস্থ করলে শ্যামল ধনুক-তীর? এমন কি শমীও           (ক) ???

ভেবে দ্যাখো , এ-পর্যন্ত এ-কথা জানে না ! রাত্রে বালুতীর ধরে  (গ)  
হেঁটে গেছে আর তাঁবু নেমে এল চারদিকে অবনত, মোটা... ...    (ঘ)
বালির উপরে উঠে অজ্ঞান ঘুমের শ্বাস থেমে থেমে দোরে           (গ)
ধাক্কা দিল, তারপর স্বপ্নে এসে দেখা দিতে তুমি চমকে ওঠা        (ঘ)

হা-খোলা সংক্ষুব্ধ দেহ ঢেকে নিয়ে মুঠোভর্তি শাড়ির প্রান্তকে           (ঙ)
আবিষ্কার করে ফের আমাকেও ডেকে দিলে... ..অন্ধকারে তোকে  (ঙ)
সৈকতের পাশে ফেলে এসেছি,এখন বালি সরিয়ে বসুধা                 (চ)
অর্ধখান করতেন জলরাশি, ঝকঝকে চোয়াল,ব্যারাকুডা                 (চ)       

তীরভূমি জ্বলে ওঠে; প্রৌঢ়তা,ধাতুর টুকরো সম্পূর্ণ চুম্বকে                (ছ)
তুলে দেখি শমী আর শ্যামল ধনুক ভস্ম, অবশেষে ক্ষুধা !                (ঝ) ???

উপরোক্ত সনেটটি শেক্সপিয়রীয় গঠনশৈলীতে নির্মাণের প্রচেষ্টা থাকলেও, তাতে পদান্ত্যমিলবিন্যাস সর্বত্র মান্যতা পায়নি।  স্তবক বিভাগে শেক্সপিয়রীয় আঙ্গিক-ই অনুসৃত হয়েছে । একজন প্রকৃত কবি, তাঁর স্বকীয়তাকে ফুটিয়ে তুলবার প্রচেষ্টা চালাবেন, এটাই স্বাভাবিক এবং সেই  নিজস্বতা ফুটিয়ে তোলার চেষ্টাকে সমীহ না করেও উপায় নেই।  এবার দেখি মৃদুল দাশগুপ্ত কীভাবে নির্মাণ করেছেন তাঁর চতুর্দশপদীকে:------
 গ্রীবার ভঙ্গীমা দেখে মনে পড়ে এইভাবে নয় ;           (ক)
তোমার প্রকৃতি ছিল বন্দরের থেকে বহুদূরে                (খ)
সমুদ্র এনেছি কাছে এই ভেবে আমিও সময়             (ক)
কাটিয়ে দিয়েছি বহু, জলে জলে, লোকালয় ঘুরে ;        (খ)
তোমার কি মনে পড়ে , মনে পড়ে আলোকস্তম্ভটি         (ক)
একবার জ্বলেছিল , সেই রাত মনেপড়ে ,পড়ে ?            (খ)
সংকেত হয়েছে প্রেম,কাঁপা ঢেঊ, তুমিও দৃশ্যটি            (ক)
মহান করেছ আরো, প্রকৃত ফুলের মতো ঝরে               (খ)

তুমি কি সময়, বলো ? তুমি তবে জেনেছো রাত্রিকে ?    (গ)
আলোকস্তম্ভকে ঘিরে আজো আজো রটে জনশ্রুতি,       (ঘ)
আজো ছুঁয়ে আছি, দ্যাখো এই জল, ফুল্লরা আমার        (ঙ) !!!!
কোথায় সমুদ্র বলে রুদ্ধশ্বাস জাগি চারদিকে---          (গ) 

আমি হাওয়া বাতাসের, তুমি রৌদ্র সিন্ধুসবিতার....        (চ)
তোমাকে জাগাবো বলে জেগে থাকে আমার প্রস্তুতি        (ঘ) ????

বিন্যাসে এটি শেক্সপিয়রিয়ান রীতির কাছাকাছি হলেও , রীতিটিকে সম্পূর্ণ ভাবে গ্রহণ করা হয়নি। বরং পেত্রার্কান অষ্টক /ষটকএর দিকেই প্রবণতা বেশি রয়েছেযদিও উপসংহার বা সিদ্ধান্ত (Volta Marks) টি শেক্সপিয়রীয়ান পদ্ধতির মতো কিন্তু পদান্ত্যমিল বিন্যাস ,অষ্টকে সম্পূর্ণ  না হলেও কিছুটা মান্যতা পেয়েছে ; কিন্তু অন্যত্র তা কোথাও মান্য করা হয়নি এবং স্তবক বিভাগ ও নয়।যদি শেষ দুটি লাইন আগের স্তবকের সঙ্গে জোড়া দিয়ে পদান্তমিলবিন্যাসটি গগঘ,ঙঙঘ -----এই ভাবে রাখা হতো তো আমরা ফরাসি সনেটের একটা বাংলা আদল কিছুটা হলেও পেতে পারতাম। লক্ষনীয় ; অষ্টকের ষষ্ঠ লাইনটিতে পদান্ত্যমিলবিন্যাস ঠিক রাখতে  পড়ে শব্দটি পরপর ২বার ব্যবহৃত হয়েছে যা, প্রায় জোর করে মেলানোর চেষ্টা বলে প্রতীতি জন্মাতে সাহায্য করতে পারে ; কিন্তু কবি যেই চতুরতার সঙ্গে তাতে একটি প্রশ্নবোধক চিহ্ন জুড়ে দিলেন তা তাঁর অসামান্য কবিত্বশক্তির দ্যুতি নিয়ে ফুটে উঠলআমরা মুগ্ধ পাঠক মাথা নোয়াতে বাধ্য হলাম। সুতরাং ,আপাত ভাবে বাংলা কবিতা যতটা পল্লবগ্রাহী উশৃঙ্খল কবিকুল দ্বারা মর্দিত বলে মনে হয় ,এসব অধীয়মানতার  পরে মনে হয় ; বাস্তব হয়তো অতটা করুণ নয়।
পণ্ডিতদের কাছে হয়তো এই রচনাটি একজন মূর্খের  অজ্ঞানতার এক অধ্যাসজনিত পণ্ডশ্রম বলে মনে হতে পারে , তাই আগে থেকেই আমি বিনম্রভাবে তাঁদের উদ্দেশে বলি; এই লেখাটি আমার জিজ্ঞাসাকে তৃপ্ত ও ঋদ্ধ করার জন্য অতলান্ত সমুদ্রে ডুব দেওয়ার সামান্য এক প্রচেষ্টা মাত্র।
এবার আরেকটি চতুর্দশপদী কবিতা দিয়ে শেষ করছি আর আশা করছি এই নিবন্ধের পাঠক-ই( যদি কেউ থাকেন তো )  নির্ধারণ করুন এটি কোন পদ্ধতিতে নির্মিত হল ;----------
৬   
কবচ
কেউ তো বলেনি আজ অক্ষর কীভাবে
মাথা থেকে জমা হয় ভেতরে বুকের
এবং বেরিয়ে আসে রাতে আকাশের
মালা হয়ে ফুটে ওঠে ,তুমিও যেভাবে
তক্ষক তক্ষক ডাকো নিজের স্বভাবে
উদ্গ্রীব আস্তিক জানে; কি রক্ষা তোমার
মন্ত্র হয়ে উচ্চারিত কবচ  আমার
সহস্রারে অধিষ্ঠিত হয়তো বা হবে

হয়তো হবেনা কিছু ,তবু অবিরাম
আমার বিশ্রাম নয়,তোমারো বিশ্রাম !
ঘুরে চলা ছবি সব ইশারা-ইঙ্গিত
ঢেকে রাখা কাল-পাত্রে যেমন সময়
ঢেকে দিচ্ছে গাঢ় লেপে বিষয়-আশয়
তুমি তার ধ্রুবতারা, তুমি পথিকৃৎ 





নিবন্ধকারের সংগে যোগাযোগ pranab.cal49@gmail.com